চট্টগ্রাম জেলার ইতিহাস
প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও প্রধান সমুদ্র বন্দর। ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য এ জেলাকে দেশের এক অনবদ্য স্থানে পরিণত করেছে। পাহাড়, সমুদ্র, উপত্যকা, অরণ্য প্রভৃতি নৈসর্গিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে এ জেলা পরিণত হয়েছে প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতনে। স্মরণাতীত কাল থেকে এর অসম ভৌগলিক অবস্থান ও পরিবেশ বর্হিবিশ্বের মানুষকে এখানে বসতি স্থাপনে আকৃষ্ট করেছে। এ জেলার ৫২৮৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে নদী এলাকা ৫৬১.৯৮ বর্গকি:মি এবং বনাঞ্চল ১২৪৩.১৪ বর্গকিলোমিটার।
তিব্বতী সূত্রে চট্টগ্রামের প্রাচীন নাম “জ্বালনধারা’-তপ্তজল সমন্বিত অঞ্চল। যা এখনো সীতাকুন্ড ও বাড়বকুন্ডে পর্বতগাত্র থেকে নি:সৃত হয়। ৯৫৩ খ্রীষ্টাব্দে আরাকান রাজ চূড়সিংহ চন্দ্র চট্টগ্রাম জয় করে একটি জয়স্তম্ভ নির্মান করেন এবং তাতে ঞঝওঞ-ঞঅজ-এটঘএ ‘যুদ্ধ করা অনুচিত’ এই বাণী লিপিবদ্ধ ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে এর বিকৃত রূপ ‘চাটিগাঁও। চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের মতে ‘চৈত্যগ্রাম থেকে চাটিগ্রাম বা চট্টগ্রামের উৎপত্তি। হিন্দুদের ধারণা ‘চট্ট’ (কুলিন ব্রাম্মন) দের নিবাস ছিল বলে চট্টল > চট্টলা, কিংবা চট্টগ্রাম হয়েছে। মুসলমানদের বিশ্বাস, শাহবদর আলম চাটি (মৃৎবর্তিকা) জ্বালিয়ে জ্বীন-পরীর কবল থেকে অঞ্চলটিকে মুক্ত করেছিলেন বলে স্থানটি চাটিগ্রাম বা চাটিগাঁও নামে অবহিত হয়েছে।
১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দে মোগলরা আরাকানিদের হটিয়ে এ এলাকা দখল করেন এবং এর নাম রাখেন ‘ইসলামাবাদ’। পরবর্তীতে ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দে মীর কাশেম আলী খানের কাছ থেকে এই জেলাটি অধিগ্রহনের পর ব্রিটিশরা এর নামকরন করেন চিটাগাং। প্রাচীন কাল থেকে সামুদ্রিক বন্দরের কারণে চট্টগ্রামের ইতিহাস ঋজু থাকেনি। এ বন্দরে নানা জাতি গোষ্ঠির আগমনের ফলে তাদের সংমিশ্রনে সঙ্কর সমাজের উদ্ভব হয়েছিল। এমনি সঙ্কর সমাজের সাংস্কৃতিক জীবনও ছিল নানা বৈচিত্রে ভরপুর। অষ্ট্রো এশিয় এবং ভোট চীন গোত্র ছিল এ অঞ্চলের আদি অধিবাসী। খ্রীষ্টোত্তর যুগে বিহার অঞ্চলের আর্য সংস্কৃতিপুষ্ট লোকেরা এ এলাকায় উপনিবিষ্ট হয় এবং সে সূত্রে ব্রাম্মন্য ধর্ম, আর্য ভাষা ও সংস্কৃতি এখানে প্রচারিত ও প্রসারিত হয়। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্ব কালে ১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দে চট্টগ্রাম মোগল সম্রাটের শাসনাধীনে আসে। মোগলদের আগে জেলা হিসাবে চট্টগ্রামের কোনো প্রশাসনিক কাঠামো কিংবা কোন স্থায়ী সীমা ছিলনা। মোগলরা কয়েকটি পরগনায় বিভক্ত করে ৯৪ বছর শাসন করে এ এলাকা। এ সময়ে চট্টগ্রাম শাসনের জন্য ফৌজদার নিযুক্ত করা হয়। ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর ও ১৫ অক্টোবর নবাব মীর কাশেম আলী খান এবং ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীয় সন্ধির ফলে চট্টগ্রাম ইংরেজদের হস্তগত হয় এবং প্রথম চিফ ও দেওয়ান হিসাবে যথাক্রমে হ্যারি ভেরেলষ্ট ও গোকুল চাঁদ ঘোষাল নিযুক্ত হন।
চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম জরিপ কাজ শুরু হয় ১৭৬৪ সালে। চট্টগ্রাম জেলার রাজস্বের ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ জরিপ ১১১৬ মঘীয় জরিপ হিসাবে সুপরিচিত। চট্টগ্রামের ইতিহাস অনেক বিস্তৃত এবং ব্যাপক। সমুদ্রবন্দরের কারনে গৌড়ের সুলতান, ত্রিপুরার হিন্দু রাজা, আরাকানের বৌদ্ধ নৃপতি, খ্রীষ্টান পুর্তগীজরাসহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী, রাজা-মহারাজা এদেশে এসেছেন এবং শাসন করেছেন। পাশাপাশি পীর আউলিয়ারাও এসেছেন ধর্ম প্রচারক হিসাবে। যার কারনে চট্টগ্রাম বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি হিসাবেও পরিচিত। এসেছেন মোঘল এবং ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও অগ্রগামী ছিল চট্টগ্রাম। উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসক বিরোধী প্রথম গেরিলা যুদ্ধের সূচনা করেন মাষ্টার দা সূর্যসেন এ চট্টগ্রাম থেকে। এছাড়া চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক কৃতিপুরুষ। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, আসকর আলী পন্ডিত, খায়রুজ্জমা, শেখ-এ চাঁটগাম কাজেম আলী মাষ্টার, মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, নবীন সেন, যাত্রামোহন সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার, আবুল ফজল, রমেশ শীল প্রমুখ।
চট্টগ্রাম জেলা ১৩১৪৮ মসজিদ , ১০২৫ মন্দির , ৫৩৫ টি বৌদ্ধ মন্দির ও ১৯২ গীর্জা আছে . হাটহাজারী Fakira মসজিদ , মুসা খান মসজিদ , কুড়া কাটনি মসজিদ , ১৬ শতকের কালা মসজিদ , ছুটি খাঁ মসজিদ , কদম মোবারাক মসজিদ , আন্দর কিল্লা মসজিদ , বাঁশখালি বক্সী হামিদ মসজিদ ও বোয়ালখালী ইস্ট গোমডান্ডি চৌধুরী পাড়া প্রাচীন মসজিদ বিখ্যাত মসজিদ হয় চট্টগ্রাম . এছাড়াও বদর আউলিয়া দরগাহ চট্টগ্রামে একটি সমাধি হয়